Searching...
Thursday, September 04, 2014
22:35

ইবোলা ভাইরাসঃ সাম্প্রতিকসময়ের সবচেয়ে বড় আতঙ্কের নাম!!!

এই বছরের এপ্রিল মাসের
শুরুতে পশ্চিম আফ্রিকার
কঙ্গোতে একটি ভয়ংকর রোগের
প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়।
দেখতে না দেখতেই
রোগটি কঙ্গো দেশটিতে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে।
শুধু তাই নয়, আক্রান্ত ব্যক্তিদের
বেশীরভাগই এই রোগে আক্রান্ত
হয়ে মৃত্যুবরণ করে। প্রকট ছোঁয়াচে এই
রোগটি খুব দ্রুতই কঙ্গোর
সীমানা পেরিয়ে পাশের দেশ
গিনি, লাইবেরিয়া,
সিয়েরা লিওনে বিস্তার লাভ করে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী জুলাই মাস
পর্যন্ত প্রায় ১৫০০জন এই মারাত্মক
প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হয় যার
ভেতর প্রায় ৭২৯জন(৫৫শতাংশ)
মারা যায়। সবচেয়ে আশঙ্কার
কথা হলো এই রোগের ভাইরাসের
সংক্রমণ ক্ষমতা অত্যন্ত বেশী, তাই
মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন প্রায়
৬০জন স্বাস্থ্যকর্মী যারা আক্রান্ত
ব্যক্তিদের সংস্পর্শে থাকার
ফলে নিজেরাই এই ভাইরাসের
আক্রমণের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
ইলেকট্রন
মাইক্রোস্কোপ
দিয়ে তোলা একটি ইবোলা ভাইরাসের
চিত্র
এটিই প্রথম আক্রমণ নয়…
পশ্চিম আফ্রিকায়
ইবোলা ভাইরাসের আক্রমণ এটিই
প্রথম নয়। ১৯৭৬ সালে সর্বপ্রথম কঙ্গোর
ইবোলা নদীর
তীরবর্তী জিয়েরা এলাকায় এই
রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ঐ
বছরের ২৬শে আগস্ট রোগটি প্রথম
মহামারি আকারে দেখা দেয়।
সর্বপ্রথম ৪৪বছর বয়সী একজন
স্কুলশিক্ষক, Mabalo Lokela-কে আক্রান্ত
ব্যক্তি হিসেবে শনাক্ত করা হয়।
ইবোলা নদীর নামের সাথে মিল
রেখে এই রোগটির ভাইরাসের
নামকরণ করা হয় ইবোলা ভাইরাস।
সেই সময় প্রায় ৩১৮জন ব্যক্তি এই
রোগে আক্রান্ত হন এবং আক্রান্ত
ব্যক্তিদের মধ্যে ২৮০জন
(শতকরা ৮৮ভাগ ) ব্যক্তি মারা যান।
পরবর্তীতে এই ভাইরাস কঙ্গোর
সীমানা ছাড়িয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ
সুদানে ছড়িয়ে পড়ে এবং ২৮৪
জনকে আক্রান্ত করে। এদের
মাঝে ১৫১ জন মারা যান।
বিশ্বব্যাপী ইবোলা ভাইরাসের
আক্রমণ
এটিই
প্রথম
নয়…
প্রাণঘাতী ইবোলা ভাইরাস
ইবোলা ভাইরাসের গঠন লম্বাটে,
কৃমির মত সূত্রাকার। এটি একটি RNA
জিনোম নিয়ে গঠিত, এই RNA জিনোম
নিউক্লিওক্যাপসিড নামের
একটি অঙ্গাণু দিয়ে বেষ্টিত থাকে।
জিনোমটিকে EBOV দিয়ে প্রকাশ
করা হয় এবং এতে প্রায়
১৯০০০টি বেসপেয়ার রয়েছে ।
লম্বাটে গোলাকার এই ভাইরাসের
গঠনকে আমরা যদি একটি সিলিন্ডার
হিসেবে বিবেচনা করি তাহলে ঐ
সিলিন্ডারের ব্যাস হবে প্রায় ৮০
ন্যানোমিটার। এর একটি লিপিড
দ্বি-স্তর বিশিষ্ট আবরণী ত্বক
থাকে যেখানে ৭-১০ ন্যানোমিটার
লম্বা তন্তুর মত
সূচালো গ্লাইকোপ্রোটিন ভাইরাল
এনকোডেড অবস্থায় থাকে।
ইবোলা ভাইরাস লম্বায় সাধারণত
৮০০-১০০০ ন্যানোমিটার পর্যন্ত হয়।
ভাইরাসটির বৈজ্ঞানিক নাম Zaire
ebolavirus। Ebola virus গণের অন্তর্ভূক্ত
পাঁচ প্রকার ভাইরাসের প্রকরণের
মধ্যে এটিই সবচেয়ে ভয়ঙ্কর।
ইবোলা ভাইরাসের
একটি গাঠনিক
চিত্র
ইবোলা ভাইরাসে আক্রান্ত
ব্যক্তির
ধরণ
এবং লক্ষণ
একজন
ব্যক্তি যখন
ইবোলা ভাইরাসে আক্রান্ত
হয় তখন প্রথমদিকের লক্ষণ
থাকে তীব্র অবসাদ ও ক্লান্তি,
মাথাব্যাথা, জ্বর এবং হাড়ের
সংযোগস্থলে অস্বাভাবিক ব্যাথা।
এর সাথে বমি এবং ডায়রিয়াও
হতে পারে। প্রথম দিকে বুকে ব্যথা,
শ্বাসকষ্ট,
গলা এবং শ্বাসনালীতে ব্যথা অনুভূত
হতে পারে। সাধারণত
ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর
রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে ৮-১০দিন
সময় লেগে যায়,
ক্ষেত্রবিশেষে এটি ২ থেকে শুরু
করে ২১দিন ও লেগে যেতে পারে।
শতকরা ৫০ভাগ রোগীর ত্বক আক্রান্ত
হয়। রক্তক্ষরণ শুরু হওয়ার আগপর্যন্ত এই
রোগের লক্ষণগুলোর
সাথে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গুজ্বর
এবং গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বিভিন্ন রোগের
লক্ষণের সাথে বেশ মিল
পাওয়া যায়।
প্রায় ৫০ শতাংশ রোগীর রোগের
লক্ষণ দেখা দেওয়ার ৫-৭ দিনের
মধ্যে দেহ থেকে ভয়ংকর রক্তক্ষরণ শুরু
হয়। রক্তক্ষরণ শুরু হয় মূলত দেহ ত্বকের
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র দিয়ে। দেহের
বাইরের অংশে রক্তক্ষরণ শুরু হলেও
ক্রমেই এটি দেহের ভিতরের
অঙ্গসমূহকে আক্রান্ত
করে এবং সেখানে ও রক্তক্ষরণ ঘটায়।
চোখের দৃষ্টিশক্তি ক্রমশ
কমে যেতে থাকে এবং এর
সাথে সাথে রক্তবমি হওয়া শুরু হয়।
প্রচণ্ড এই রক্তক্ষরণ রোগীকে ক্রমশ
মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়।

0 comments:

Post a Comment

 
Back to top!